করোনা আতঙ্কে নিত্যপণ্য কেনার ধুম, দাম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ জরুরি এখনই

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিশ্বের প্রায় ১৬৫ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। যদিও কঠোর সতর্কাতার কারণে এটি এথস দেশে ব্যপকতা পায়নি। তবু আগামীতে পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেয় তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় নগরবাসী। ডালাপালা মেলে দেওয়া কিছু গুজবে তৈরি হচ্ছে আতঙ্ক। সেই সঙ্গে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় একশ্রেণির মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। কোসো বাদ-বিচার না করেই প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত জিনিসপত্র কিনে মজুত করছেন অনেকেই।

নিত্যপণ্যের বিকিকিনি বেড়ে গেছে তিন থেকে চার গুণ। সুযোগ নিতে কিছু কিছু পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর বড় পাইকারি পণ্যের বাজার কারওয়ান বাজারসহ পাড়া-মহল্লার কয়েকটি বাজার ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

কারওয়ান বাজারে দেখা গেছে, যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি মানুষের ভিড়। বিক্রেতারা এতোই ব্যস্ত যে দরকষাকষি সুযোগ তারা দিচ্ছেন না। ক্রেতাও ভিড় এড়াতে দর কষাকষি বা যাচাইবাছাই না করেই বাড়তি দামেই পণ্য কিনছেন।। যাদের প্রয়োজন এক কেজি তারা কিনছেন ৫/৬ কেজি। প্রায় সব ধরের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে বেচাকেনার এই চিত্র। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে এবং বাড়তি ভিড় বা লোক সমাগম এড়িয়ে চলতেই এমনটা করছেন বলে দাবি ক্রেতাদের।

বাজারে নিত্যপণ্যগুলোর মধ্যে চাল, আটা,সয়াবিন তেল চাহিদা বেড়ে গেছে। মোটা ও চিকন, দুই রকম চালের দামই কেজি প্রতি ২ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। কারওয়ানবাজারে এক সপ্তাহ আগে জিরাশাইল সেদ্ধ চাল বিক্রি হয়েছিল বস্তাপ্রতি ২ হাজার ১০০ টাকায়। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৩০০ টাকা। এ ছাড়া মিনিকেট বস্তাপ্রতি ২৫০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৭৫০, স্বর্ণা ১৩০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৪৮০, মোটা ২৫০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ২৫০, গুটি ১০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৩৫০, বাসমতী ২০০ টাকা বেড়ে বস্তাপ্রতি ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সরবারহ কম বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা আটা-ময়দার দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন। ২৮ টাকা কেজির আটা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা ।প্রতি পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ১৫ টাকা দাম বাড়িয়ে ৪৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

নিত্যপন্যের দোকানে এখন স্যানিটারি আইটেম যেমন, হ্যান্ডওয়াশ, সেভলন, ডেটলজাতীয় পণ্যগুলো মানুষ বেশি কিনছে। পণ্যগুলোর প্রতিটি ৫ থেকে ৫০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। যদিও সরকারে পক্ষ থেকে এসব সামগ্রীর দাম না বাড়ানোর নির্দেশনা রয়েছে, আছে সাজার বিধান। কিন্তু তদারকী না থাকায় বেশি দামেই এসব সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। থুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসব সামগ্রী বেশি দামেই তাদের কিনে আনতে হয়েছে।

শান্তিনগর, মালিবাগ, কাঁঠালবাগান ও হাতিরপুলসহ সব বাজারেই দেখা গেছে প্রায় একই চিত্র। চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই দোকানগুলো বেচাকেনার পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। হঠাৎ বেচাকেনা বেড়ে যাওযার বিষয়ে বিক্রেতারা বলছেন: করোনায় বাংলাদেশ মারাত্মকভাবেই আক্রান্ত হবে, এটা এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। মানুষের মধ্যে এখন এই আতঙ্ক চরম আকার ধারণ করেছে। সামনে হয়তো বাইরে চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ আসতে পারে। সেজন্য এক-দেড় মাসের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে মজুদ করে রাখছেন সবাই।

বাজারে পণ্যের যথেষ্ট সরবরাহ থাকলেও ক্রেতারা বেশি পণ্য কেনায় জিনিমপত্রের দাম কিছুটা বেড়েছে স্বীকার করছেন ব্যবসায়ীর। তবে দাম এখনো লাগামহীন হয়নি বলে মনে করেন। সামনে পণ্যে দামা বাড়াটা নির্ভর করছে করোনা ভাইরাসে গতিপ্রকৃতির উপর। সংক্রমনের আশঙ্কা বাড়লে পণ্যের চাহিদা আরও বাড়বে। তাতে সরবরাহে টান পড়বে। তখন পাইকারি পর্যায়ে দাম বেড়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই খুচরা দামও বাড়াতে হবে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।

নিত্যপণ্যে দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমি বলবো ভোক্তাদের কারণেই পণ্যের দাম বাড়ছে। কারণ এত ক্রেতা একসাথে হুমড়ি খেয়ে পড়বেন কেন বাজারে? দেশে তো এখনো এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে পণ্যের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

বাণিজ্য সচিব বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে এটা সত্য। কিন্তু এতে পণ্যের বাজারে প্রভাব পড়ার মত কোনো কারণ নেই। দেশে প্রচুর পরিমাণে পণ্য মজুদ রয়েছে। এমনকি কিছুটা আমদানি নির্ভর যেসব পণ্য সেগুলোও প্রচুর পরিমাণে আমদানি করা হয়েছে। মজুদও রয়েছে। তাই রমজানেও কোন পণ্যের ঘাটতি হবে না।

ক্রেতাদের অতিরিক্ত পণ্য না কেনার আহ্বান জানিয়ে ড. জাফর উদ্দিন বলেন, করোনা পরিস্থিতি যেদিকেই যাক নিত্যপণ্য নিয়ে আতঙ্কিদ হওয়ার কোনো কারণ নাই। প্রতিটি বাজারই আমাদের মনিটরিংয়ের আওতায় আছে। অকারণে দাম বাড়ানোর অভিযোগ পেলে আমরা প ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভোক্তা অধিদপ্তরকে শিগগিরিই বাজারে অভিযান জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন